সুন্দর করে কথা বলা শিখতে চাও, ১০টি উপায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ
বি.দ্র: প্রয়োজনে উপরের অডিও শুনতে পারি.
আমরা আমাদের জীবনে অনেক মানুষকে দেখেছি যারা অনেক জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের ঠিক মতো প্রকাশ করতে পারে না। এমনকি শিক্ষা জীবনে এমন অনেক শিক্ষকদের দেখেছি যাঁদের পড়া আমরা কিছুই বুঝতাম না । নিঃসন্দেহে তারা অনেক জ্ঞানী কিন্তু ঘাটতি ছিল উপস্থাপনের।
সুন্দর করে কথা বলা হচ্ছে একটি আর্ট। স্মার্টনেসের প্রথম শর্ত সুন্দর কথা। অনেকেই দেখা যায় অনেক জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও উপস্থাপনের ঘাটতি থাকায় কেউ তাতে আগ্রহ দেখায় না। নিজেকে প্রকাশ করতে কে না চায়? সবাই চায় নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে। বাহ্যিক সৌন্দর্যের মধ্যে ভাব প্রকাশের সৌন্দর্য হচ্ছে অন্যতম একটি উপাদান। আর এজন্যই প্রয়োজন স্মার্টভাবে কথা বলার উপায় জানা।
অনেকেই আছেন খুব ভালো মনের মানুষ, দেখতেও সুন্দর কিন্তু তিনি ভাল কথা বললেও যিনি শুনছেন তার ভাল লাগে না। শুধুমাত্র গুছিয়ে কথা বলার উপায় না জানার কারণে। এ কাজ খুব কঠিন কিছু নয়। নিজের চেষ্টা এবং সামান্য কিছু গাইডলাইনই যথেষ্ট। উপস্থাপন আরও চমকপ্রদ করতে আমরা আজকে দেখব সুন্দর করে কথা বলার কয়েকটি গাইডলাইন।
১। নিজেকে বিশ্লেষণ কর:
প্রথমেই নিজেকে বিশ্লেষণ করতে হবে। তুমি কী বিষয়ে কথা বলছ, কীভাবে কথাটি শুরু করছ, কার সঙ্গে কথা বলছ এবং তার সাথে দেখতে হবে তোমার কণ্ঠস্বরটি কেমন। সেটি কি খুব বেশি কর্কশ , খুব মিষ্টি নাকি স্বাভাবিক। যেই বিষয় নিয়ে তুমি কথা বলছ সেই বিষয়ে তোমার দক্ষতা কেমন এটি জানা ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিশ্লেষণের ফলাফল কাগজে লিখে রাখাই ভাল। সুন্দর করে কথা বলা পুরোটাই চর্চার ওপর নির্ভরশীল।
২। আগে শোনার ওপর গুরুত্ব দাও:
কোন একটা আলোচনায় যোগ দিতে গেলে আগে শোন কে কী বলছে। হুট করে কোন মন্তব্য করা বোকামির কাজ। মূল বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা কর। কেউ যদি অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করে তবে তাকে অনুসরণ করা যেতে পারে।
৩। সুস্পষ্ট মতামত প্রয়োগ কর:
কখনোই এমন কোন কথা বলা উচিত নয় যেটিতে মানুষ খুব বিব্রতবোধ করে কিংবা বিষয়বস্তুর সঙ্গে একদমই খাপ খায় না। অন্যের কথার মাঝে কথা বলাটা অনেকেই পছন্দ করে না। তবে কথা যদি বলতেই হয় সেটি ভদ্রভাবে বললে সবাই তাতে সাড়া দেবে। যেমনঃ “Excuse me” বলে বক্তার কথার সাথে যা যোগ করতে চাচ্ছিলে কিংবা সেই বিষয়ে কোন ব্যক্তিগত মতামতও দেয়া যেতে পারে।
৪। আত্মবিশ্বাসের সাথে বলো:
যা বলবে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলবে। দ্বিধা নিয়ে কিছু বলা উচিৎ নয়। বক্তাকে দ্বিধান্বিত দেখলে শ্রোতারা বক্তার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। আর যা বলছো, সেই কথাটি বলার সময় আত্মবিশ্বাসের কারণটি ও বলা যেতে পারে।
৫। পরিবেশ পরিস্থিতির দিকে খেয়াল কর:
পরিবেশ পরিস্থিতি সব সময় এক থাকবে না। সেই পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে কথা বলতে হয়। একটি আলোচনার ক্ষেত্রেও পরিবেশ পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়। কখনো হাসির সময় আসে আবার কখনো কঠোর সময় আসে কিংবা অনেক সময় অনেক গম্ভীর পরিস্থিতি তৈরি হয়। সব পরস্থিতিতে সব কথা মানায় না। নির্দিষ্ট সময়পোযোগী মন্তব্য করাই ভাল ।
৬। মূল বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখো:
কথা বলার সময়, সবসময় মূল বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অনেক সময় কথা বলতে বলতে বক্তা মূল বিষয় থেকে সরে পড়ে। তখন শ্রোতারা খুব বিরক্তবোধ করে। কারণ তারা তাদের মূল্যবান সময় গল্পে নষ্ট করতে চান না। দরকার হলে লিখে রাখতে পারো যেটি নিয়ে কথা বলতে চাও। তাহলে বক্তব্যগুলো মূল বিষয়ের মধ্যেই চলে আসবে।
৭। Gap দিয়ে কথা বলো:
কথা বলার সময় একটু gap দিয়ে কথা বললে শ্রোতাদের বুঝতে সুবিধা হয়। বেশি তাড়াতাড়ি কথা বলা খুব বাজে একটি অভ্যাস। এতে শ্রোতাদের ও বুঝতে কষ্ট হয়। Gap দিয়ে কথা বললে মূল বিষয়ের ওপর গুরুত্বও দেয়া যায়। অন্যদিকে ধীরগতিতে কথা বললে শ্রোতারা বিরক্তবোধ করে এবং শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সুতরাং, মধ্যবর্তী একটি মাপ বেছে কথা বললে শ্রোতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া যায়। কথা বলার সময় গুরুত্ব অনুযায়ী কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করা যেতে পারে।
৮। চলিত ভাষায় কথা বলো:
যে ভাষা সবাই বুঝে সে ভাষায় কথা বলা উচিৎ । উচ্চারণ শুদ্ধ করলে কথা শুনতেও অনেক ভালো লাগে । সঠিক বাংলা উচ্চারণ করে তাক লাগিয়ে দেয়া যায়। খুব বেশি দরকার পড়লে উচ্চারণের ওপর কিছু কোর্স ও করা যেতে পারে।
৯। কোনো Source অনুসরণ করা যেতে পারে:
উচ্চারণ সুন্দর করতে কিংবা জ্ঞান আহরণে বিভিন্ন source অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমনঃ খবর, সিনেমা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
১০। বিভিন্ন রকম বই পড়:
জ্ঞান অর্জনে বই এর বিকল্প নেই। উচ্চারণ শুদ্ধ করতে বই এর কঠিন শব্দগুলো জোরে জোরে পড়ে অনুশীলন করা যেতে পারে ।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সুন্দর করে কথা বলা পুরোটাই নিজের হাতে । নিজস্ব চেষ্টা এবং উপরের গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করলে সুন্দর করে কথা বলা হবে নিজের হাতের মুঠোয়।
No comments